আপনি জানেন কি, মুভি পাইরেসির পেছনের শ্বাসরুদ্ধকর গল্পগুলো?!
বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ কোটি মুভি অবৈধভাবে ইন্টারনেট থেকে নামানো হচ্ছে। কিন্তু কখনো কি আমরা চিন্তা করে দেখেছি, কিভাবে একটা মুভি অনলাইনে সুলভ হয়? অনেকেই ভাবছেন ধুর এইটা জানার দরকার কি? গুগলে সার্চ বা গ্রুপে পোষ্ট দিলেই তো ভুরি ভুরি ডিরেক্ট লিংক বা টরেন্ট বা রার ফাইলের লিংক হাজির হয়ে যায় আর অমনি নামানো শুরু করি।ওয়েল, পাইরেটেড মুভি রিলিজ নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে ১ হাজার পৃষ্ঠার একটা বই লিখতে হবে। আমি খুব সংক্ষেপে লিখছি, যতটুকু না জানলেই নয়।
অনলাইন দুনিয়ায় যত যা কিছু পাইরেটেড হয় [মুভি, গান, গেইমস, সফটওয়্যার, ইবুক, ক্রাকস ইত্যাদি], সব করে ওয়ারেজরা। Software এর ware থেকে warez শব্দটি এসেছে। ওয়ারেজ তাদেরকে বলা হয় যারা কপিরাইট আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মূল প্রডাক্টটি এনকোড করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়। ওয়ারেজ একটা সংঘবদ্ধ পাইরেসি গ্রুপ। পৃথিবীতে প্রায় শ খানেক ওয়ারেজ গ্রুপ আছে। এগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড গ্রুপ। ডার্কনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এক একটা ডার্কনেটের সিকিউরিটি বিভাগে অসম্ভব প্রতিভাবান সব হ্যাকার এবং প্রোগ্রামাররা কাজ করেন। কারন এই নেটওয়ার্ক ধরতে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব গোয়েন্দাবাহিনী সদা তৎপর থাকে।
তো ওয়োরেজরা কিন্তু আপনার আমার জন্য মুভি রিলিজ করে না। করে যার যার গ্রুপের জন্য। এবং এই রিলিজের জন্য বেশ কিছু ধাপ, প্রক্রিয়া ও খুব পরিকল্পিত কিছু কাজ করা হয়। পুরো ব্যাপারটিই এতটাই স্মার্ট যে জানতে পারলে অবাক হয়ে যেতে হয়। একটা হায়ারারকি দেয়া হলো। এছাড়া উইকিপিডিয়ায় বিস্তারিত লেখা আছে। যাদের আগ্রহ, সেখান থেকে পড়ে নেবেন।
প্রশ্ন করতে পারেন, মুভি পাইরেট করে ফ্রি তে ছেড়ে ওয়ারেজদের লাভ কি? লাভ হচ্ছে ট্রাফিক। নিউজ পোর্টালগুলোর পরে পৃথিবীতে সবচাইতে বেশী ট্রাফিক থাকে ওয়ারেজ সাইটগুলোর। ট্রাফিক সংখ্যা আতঁকে উঠার মতো। তাদের লাভ এই ট্রাফিক। কারন এটা দেখিয়ে তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন পায় তাদের সাইটে। কিছু কিছু ওয়ারেজ গ্রুপ ’জিরো ডে’ মুভি রিলিজের জন্য বিখ্যাত। মানে, একটা সিনেমা যেদিন হলে রিলিজ হয়, ঠিক ঐদিনই ঐ সিনেমাটা তাদের গ্রুপে চলে আসে। মাঝে মাঝে রিলিজের আগেও আসে। (যেমন: আমেরিকান পাই মুভিটি নাকি হলে রিলিজ হওয়ারাও দুই মাস আগে মূল প্রিন্টটি ওয়ারেজ গ্রুপ ছেড়ে দেয়। চিন্তা করেন, দুই মাস!!)
মোটা দাগে পাইরেসির পদ্ধতিটা হলো, প্রথমে একটা মুভি এনকোড করে সেটাকে ওয়ারেজদের নিজস্ব সার্ভারে আপলোড করে রাখা হয়। তারপর সেটা অটো ডিকোড করে পিটুপি (পিয়ার টু পিয়ার) ফাইল শেয়ারিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রুপের ভেতর ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর সেটাকে নামিয়ে কপি করে মেটা ডাটা বদলিয়ে আবার আপ করা হয়, তারপর আবার নামিয়ে কপি আবার আরেকটা সাইটে আপ করা হয়। এমনটা করা হয় যাতে করে কেউ অরিজিনাল মুভি ফাইলটা ট্রেস করতে না পারে। পুরো ব্যাপারটিই অসম্ভব দ্রুততার সাথে করা হয়। এভাবেই শেষপর্যন্ত এগুলো মেগাআপলোডের মতো ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসবাইট আর টরেন্ট সাইটগুলোতে আসে। আমরা সেখানে থেকেই নামাই। সুতরাং, আমরা হচ্ছি ওয়ারেজদের এন্ড ইউজার।
ওয়োরেজ গ্রুপে তাদের নিজস্ব কোডেকও ফ্রিতে পাওয়া যায় এবং বেশীরভাগ সময়ই সফটওয়্যার কোম্পানির বানানো বানিজ্যিক কোডেকের চাইতে তাদের কোডেকগুলো হয় অনেক বেশী কার্যকর ও জনপ্রিয় (যেমন Xvid এবং x264 কোডেক)। জনশ্রুতী আছে, কোডেকের জগতের বিস্ময়, বিখ্যাত Matroska, [ভিডিও ফাইল এক্সটেনশান .mkv] মাল্টিমিডিয়া কন্টেইনার কোডেক সর্বপ্রথম রাশিয়ান একটা ওয়ারেজ গ্রুপ থেকেই রিলিজ হয়।
যে কেউ চাইলেই কোন ওয়ারেজ গ্রুপের মেম্বার হতে পারেন না। এইজন্য প্রফেশনাল এনকোডার হতে হয়, অনেক রকম ব্যাকগ্রাউন্প চেক করা হয় সিকিউরিটি ইস্যুর কারনে। মুভি নামানোর সময় খেয়াল করে দেখবেন মুভির নামের সাথে কোডেকের নাম, মুক্তির সাল, প্রিন্ট কোয়ালিটি এবং কোডারের নাম উল্লেখ করা থাকে। এটা বাধ্যতামূলক। কোন ওয়ারেজ যদি এই ইনফোগুলো না দেন তাহলে তার এনকোডিংকে ডিসকোয়ালিফাই করা হয়। [যেমন:47 Ronin 2013 WEBRip x264 AC3-FooKaS. এখানে মুভি নাম হচ্ছে: 47 Ronin মুক্তির সাল 2013 প্রিন্ট কোয়ালিটি WEBRip কোডেকের নাম x264 AC3 এবং কোডারের নাম FooKaS]
একটা ওয়ারেজ গ্রুপ বিভিন্ন প্রিন্ট ফরম্যাটে এক একটা মুভি রিলিজ করে। মুভি নামানোর সময় আমরা যে ক্যাম রিপ, ওয়বে রিপ লেখা দেখি, এগুলা সেই জিনিস। পরের পোষ্টে প্রিন্ট রিলিজ নিয়ে লিখেছি।
Thanks for reading my news about আপনি জানেন কি, মুভি পাইরেসির পেছনের শ্বাসরুদ্ধকর গল্পগুলো?! at my blog Tic Droid if you want too share this article, please put the resource, and if you think this article is very usefully dont forget to bookmark this site with CTRL + D on your keyboard to web browser.